ঘরে বাইরে - এর সন্দীপ নেই : স্মৃতি আগলে দাঁড়িয়ে চকদিঘী জমিদারবাড়ীর বাগানবাটি

15th November 2020 8:43 pm বর্ধমান
ঘরে বাইরে - এর সন্দীপ নেই : স্মৃতি আগলে দাঁড়িয়ে চকদিঘী জমিদারবাড়ীর বাগানবাটি


প্রদীপ চট্টোপাধ‍্যায় ( জামালপুর ) :  চিকিৎসকরা সর্বত ভাবে প্রচেষ্টা চালালেও  শেষ পর্যন্ত জীবন যুদ্ধে হার মানলেন ফেলুদা । ইহলোক ত্যাগ করে পরলোকবাসী হলেন বাংলা চলচ্চিত্র ,নাট‍্য ও কাব্য জগতের নক্ষত্র ফেলুদা তথা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় । 
তাঁর প্রয়াণে শোকাতুর গোটা বাংলা। শোকাতুর পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের চকদিঘির বাসিন্দারাও ।চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে চকদিঘির জমিদারদের  বাগানবাটিতে টানা বেশ কয়েকদিন ‘ঘরে বাইরে ’ ছবির শুটিং করেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় । সেই সময়ে প্রিয় শিল্পিকে একবার কাছ থেকে দেখতে নাওয়া খাওয়া ভুলে চকদিঘির বহু মানুষ পড়ে থাকতেন বাগানবাটিতে। তখন চকদিঘির কয়েকজন যুবক সত্যজিত রায়ের অনুরোধে  ঘরে বাইরে ছবিতে পার্শ্ব চরিত্রে  অভিনয়ও  করেছিলেন।আজ আর সৌমিত্র বাবু নেই । তবে সৌমিত্র বাবুর স্মৃতি রয়ে গেছে  চকদিঘির বাসিন্দাদের ।  ইংরাজ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজত্ব কালে  এই বাংলায় জমিদারি ব্যবস্থার পত্তন হয়  । সেই সমসাময়িক কালের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে  জামালপুরের চকদিঘির  জমিদারদের নামও । দেশ স্বাধীন হবার পর জমিদারি প্রথা বিলিন হয়েগেলেও ১০০ বিঘা জমি জুড়ে থাকা  চকদিঘির বাগান বাটি আজও সেই জমিদারি ঐতিহ্যের স্বাক্ষ বহন করে চলেছে । যার কোনায় কোনায় ছড়িয়ে রয়েছে জমিদারি রাজত্বের নানা নিদর্শন ।  পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর  মহাশয় ছিলেন  চকদিঘির জমিদার পরিবারের সবথেকে কাছের মানুষ । এই জমিবার বংশের ক্ষ্যাতি শীর্ষে পৌছেছিল জমিদার সারদাপ্রসাদ সিংহরারের হাত ধরে । চকদিঘি বাগানবাটির পরিবেশ মুগ্ধ করেছিল খ্যাতনামা চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়  মহাশয় কে । আশির দশকে তার পরিচালিত ‘ঘরে বাইরে’ সিনেমার প্রায় পুরোটারই শুটিং হয়ছিল এই বাগান বাটিতেই। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ,ভিক্টর ব্যানার্জী , স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত  প্রমুখ  শিল্পীরা ঘরেবাইরে ছবির শুটিংয়ের জন্য চকদিঘির বাগানবাটিতে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন ।সেই ছবিটি মুক্তি পাবার পর চকদিঘি জমিদার বাড়ির পরিচিতি  দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে । 

সত্যজিৎ রায়ের অনুরোধে ঘরে বাইরে ছবিতে পালকি বাহকের পার্শ্ব চরিত্রে চকদিঘি এলাকার যে চারজন অভিনয় করেছিলেন তাঁদের মধ্যে একজন হলেন  সত্যজিৎ সেন । সেদিনের যুবক সত্যজিৎ সেন এখন সত্তরোর্ধ্ব। বয়সের ভারে তিনিও ভারাক্রান্ত । 
রবিবার বিকালে চকদিঘির বাগানবাটিতে দাঁড়িয়ে সত্যজিৎ সেন বলেন , সৌমিত্র বাবু আর বেচে নেই এই কথাটা ভাবতেই তাঁর কষ্ট হচ্ছে ।শুটিংয়ের সময়কার স্মৃতি রোমন্থন করে সত্যজিত বাবু বলেন ,টানা এক সপ্তাহেরও বেশি দিন বাগানবাটিতে শুটিং হয়েছিল । সেই সময়ে প্রখ্যাত চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায় এবং তাঁর স্ত্রী বিজয়া রায় ও পুত্র সন্দীপ রায় বাগানবাটিতেই থাকছিলেন। শিল্পী হিসাবে তাঁদের সঙ্গেই থাকছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় , স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত , ভিক্টর ব্যানার্জী সহ অন্য  শিল্পীরা । জমিদারদের বাগানবাটির বৈঠকখানা ঘর জুড়েই নানা দৃশ্য গ্রহন হয়েছিল । সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও সত্যজিত রায়কে একবার স্বচোক্ষে দেখার জন্য তিনি ও তাঁর বন্ধুরা নাওয়া খাওয়া ভুলে বাগানবাটিতেই তখন পড়ে থাকতেন ।ওই সময়েই সুদর্শন সুপুরুষ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে কিছুটা হলেও কাছ থেকে দেখার ও সংলাপ শোনার সৌভাগ্য তাঁর হয়েছিল । শুটিং দেখার জন্য বাগানবাটি জুড়ে প্রচুর মানুষ ভিড় জমাতেন । সত্যজিৎ সেন বলেন , “চকদিঘির জমিদারদের একটি বাড়ি তিনি দেখাশুনা করতেন । সেই সুবাদে সুটিং চলাকালীনও  বাগানবাটির বৈঠকখানা ঘরের কাছে তিনি যেতে পারতেন । একদিন সৌমিত্র বাবু ও সত্যজিৎ রায় বৈঠকখানা ঘরের সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন । তখন হঠাৎতই সত্যজিৎ রায় তাঁকে ডেকে বলেন , । ‘পালকি বাহকের পার্শ্ব চরিত্রে আমার কয়েকজন যুবককে দরকার । তুমি যোগাড় করে দিতে পারবে ? সত্যজিৎ সেন বলেন , প্রখ্যাত চিত্র পরিচালকের সেই কথায় আপ্লুত হয়ে তিনি ও গ্রামের আরও তিনজন পালকি  বাহকের  পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন ।’ এছাড়াও সত্যজিত রায় একদিন তাঁদের অনুরোধ করেছিলেন চেয়ারে বসিয়ে তাঁকে বৈঠকখানা ঘরের নিচ তলা থেকে উপরের তলায় নিয়ে যাবার জন্য । সেই অনুরোধও পূরণ করে ছিলেন বলে সত্যজিত সেন জানালেন । ”

    
বাগানগাটির লাগোয়া একটি বাড়িতে বসবাস করেন মধ্যবয়স্ক বধূ কাঞ্চন ঘোষ ।  তিনি জানালেন , ঘরে বাইরে সিনেমার সুটিং চলাকালীন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় কে একবার কাছ থেকে দেখার জন্য তিনি আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে ছিলেন । কিন্তু সেই সৌভাগ্য হয় নি । তবে কিছুটা দূর থেকে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় কে দেখতে পেয়েছিলেন । ওই দৃশ্যে ভিক্টর ব্যানার্জী ঘোড়ায় চাপছিলেন আর কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন সৌমিত্র বাবু । পরে বাগানবাটির অদূরে হয়েছিল একটি চালাঘর পোড়ানোর দৃশ্যের শুটিং । কাঞ্চনদেবী এদিন বলেন , সৌমিত্র বাবু মারা গেছেন শুনে চকদিঘি এলাকার সকল বাসিন্দাই মর্মাহত । তবে সৌমিত্র বাবুকে আজীবন মনে রাখবেন চকদিঘির আপামোর বাসিন্দা । ওনাকে ভোলার নয় । 





Others News

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা


প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ( বর্ধমান ) : প্রায় এক বছর আগে আবেদন করেও মেয়ের জাতিগত শংসাপত্র মেলেনি । আবেদনকারীদের জাতি শংসাপত্র দেওয়ার
ক্ষেত্রে দেরি করা যাবেনা বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।কিন্তু বাস্তবে ঠিক তার উল্টোটাই ঘটে চলেছে।প্রায় এক বছর আগে  চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে  আবেদন করেছিলেন মা।কিন্তু মেয়ে কে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসলেও জাতি  শংসাপত্র আজও না মেলায় কার্যত হতাশ হয়ে পড়েছেন পূর্ব বর্ধমানের মেমারির রাধাকান্তপুর নিবাসী ঊর্মিলা দাস।ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য ঊর্মিলাদেবী বৃহস্পতি বার মেমারি ১ ব্লক বিডিও অফিসে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন। শংসাপত্র পাবার জন্য বিডিও সাহেব কি ব্যবস্থা করেন সেদিকেই এখন তাকিয়ে ঊর্মিলাদেবী। 

বিডিওকে লিখিত আবেদনে ঊর্মিলাদেবী জানিয়েছেন ,তাঁর স্বামী মানিক দাস দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী ।বছর ১০ বয়সী তাঁদের একমাত্র কন্যা গ্রামের বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত কালে তাঁর ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য তিনি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারী আবেদন করেছিলেন।  উর্মিলাদেবী বলেন ,তার পর থেকে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে  গেলেও তিনি তাঁর মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পান না।মেয়ের পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসায় গত অক্টোবর মাসের শেষের দিকে তিনি শংসাপত্রের বিষয়ে মেমারি ১ ব্লকের বিডিও অফিসে খোঁজ নিতে যান।জাতি শংসাপত্র বিষয়ের বায়িত্বে থাকা বিডিও অফিসের আধিকারিক তাঁকে অনলাইনে এই সংক্রান্ত একটি নথি বের করে আনতে বলেন । অনলাইনে সেই নথি বের করেনিয়ে তিনি ফের ওই আধিকারিকের কাছে যান । তা দেখার পর ওই আধিকারিক তাঁকে  ২০ দিন বাদে আসতে বলেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন , তিনি ২৫ দিন বাদে যাবার পর ওই আধিকারিক তাঁকে গোপগন্তার ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে গিয়ে খোঁজ নেবার কথা বলেন । তিনি এরপর গ্রামপঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যান । নথি ঘেঁটে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে কোন ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি।ঊর্মিলাদেবী দাবী করেন ,এই ভাবে তিনি একবার বিডিও অফিস , আবার পঞ্চায়েত অফিসে দরবার করে চলেন । কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছু হয় না। মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য  গত ১৩ ডিসেম্বর ফের তিনি বিডিও অফিসে যান ।ওই দিনও বিডিও অফিসের জাতি শংসাপত্র বিষয়ক বিভাগের আধিকারিক তাঁকে একই ভাবে পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যেতে বলে দায় সারেন। পরদিন তিনি পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে গেলে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ ফের জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে  ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি । কেন মেয়ের জাতি শংসাপত্র পাচ্ছেন না সেই বিষয়ে  না পঞ্চায়েত না ব্লক প্রশাসনের কর্তৃপক্ষ কেউই তাঁকে কিছু জানাতে পারেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন ,পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির আগে তার মেয়ে যাতে ওবিসি শংসাপত্র পেয়ে যায় তার ব্যবস্থা করার জন্য এদিন তিনি বিডিওর কাছে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন । মেমারী ১ ব্লকের বিডিও আলী মহম্মদ ওলি উল্লাহ এদিন বলেন ,“জাতি শংসাপত্র পাবার জন্য হাজার হাজার আবেদন জমা পড়ছে । তবে ঊর্মিলাদেবীর কন্যা দ্রুত যাতে বিবিসি শংসাপত্র দ্রুথ পান সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে “। মেমারির বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য্য বলেন,’মেমারি  বিধানসভা এলাকার আবেদনকারীরা দ্রুত যাতে জাতি শংসাপত্র পান সেই বিষয়ে প্রশাসনকে আরও তৎপর হওয়ার কথা বলবো’।